ঘুরে এলাম নিঝুমদ্বীপ

আমাদের ঘুরাঘুরির তালিকায় সর্বশেষ ছিলো বান্দরবন ,পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিকান

এবার আমরা চার বন্ধু ঘূরতে গেলাম নিঝুমদ্বীপে মুলত অন্যদের থেকে একটু ব্যতিক্রম জায়গায় ঘুরতে যাবো এই ধরনের চিন্তা থেকেই নিঝুমদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্তা শুরু করলাম

আমরা চার বন্ধু রওয়ানা দিয়েছি কুমিল্লা থেকে সকাল সাতটার দিকে উপকুল বাস দিয়ে যাত্তা শুরু করলাম কুমিল্লা থেকে সরাসরি নোয়াখালি সোনাপুর । যারা ঢাকা থেকে আসতে চান তারা "ভি.আই.পি" বা "একুশে" বাসে করে নোয়াখালীর সোনাপুর আসুন

এবার বাসে অথবা সিএনজিতে করে চলে আসুন চেয়ারম্যান ঘাট ,যদি বাসে আসেন তাহলে প্রতিজন ৪৫ টাকা করে ভাড়া লাগবে আর সিএনজি ২৫০ টাকার মতো নিবে জায়গায় জায়গায় থামানোর ঝামেলা হতে বাচতে সিএনজি নেওয়াটাই বুদ্ধিমানরে কাজ হবে , ১ঘন্টা ৩০ মিনিটের মতো লাগবে ।নিচে চেয়ারম্যান ঘাটের ছবি


এবার যেতে হবে সীট্রাকে চেয়ারম্যানঘাট হতে হাতিয়ার নলছিড়া ঘাট


আমরা গিয়েছিলাম শুক্রবারে তাই ১২টার দিকে চেয়ারম্যানঘাট পৌছানো সত্ত্বেও নামাজের পরে সীট্রাক ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৩ টার মতো বেজে গিয়েছিলো । সীট্রাকে ভাড়া নিবে প্রতি মাথা ৭০ টাকা করে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা



এছাড়াও ঢাকা হতে সরাসরি সপ্তাহে ৭দিনই বিকাল ৫টার সময় লঞ্চ যায় এই লঞ্চগুলো হাতিয়ার তমিরুদ্দিন পর্যন্ত যায় হাতিয়াতে দুটি লন্ঝঘাট আছে একটি নলছিড়া আর আরেকটি তমুরুদ্দিন । মাঝে মনপুরাতে ৩০ মিনিটের ব্রেক (৩০ বললেও ১ ঘন্টা) এই ফাকে মনপুরার বাজার এবং আশে পাশে দৌড় দিয়া ঘুরে আসা যায়

যাদের টাকা পয়সা কোন ব্যাপারই না অথবা ১০-১৫ জন সাথে আছে তারা তমুরুদ্দিন অথবা চেয়ারম্যান ঘাট হতে সরাসরি ট্রলার ভাড়া করে নিঝুমদ্বীপ চলে যেতে পারেন ভাড়া নিবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে অথবা সকাল সকাল পৌছাতে পারলে মাছ ধররা ট্রলার খুজে দেখতে পারেন প্রতিজন মাত্ত ১০০/১৫০ টাকার মাঝে নিঝুমদ্বীপে চলে যেতে পারবেন ।

তমুরুদ্দিন অথবা নলছিড়া ঘাট হতে ম্যক্সিজাতিয় জীপে করে অথবা টেক্সি ভাড়া করে যেতে হবে জাহাজমারা ঘাট । ম্যাক্সির বেলায় ভাড়া নিবে ৪০-৪৫ টাকা আর টেক্সি ভাড়া নিতে পারে ৩০০ টাকা

আমারা হাতিয়া পৌছতে পৌছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো কারণ চেয়ারম্যানঘাটে সাড়ে তিন ঘন্টা লেট সন্ধ্যা হওয়াতে আমরা হাতিয়াতে রাতে থাকতে হয়েছে হাতিয়াতে যদি কোন কারণে থাকতে হয় তাহলে হোটেল প্রিন্সে থাকতে পারেন

জাহাজমারা পৌছানোর পর জাহাজমারা ঘাটে যেতে হবে আর এজন্য রিকশা ভাড়া করতে হয়, প্রতি রিকশা আমরা ৭০ টাকা করে দিয়েছিলাম

জাহাজমারা ঘাট পেরুলেই নিঝুমদ্বীপ । ঘাট পার হতে প্রতি জন ১০ টাকা করে দিতে হয় তবে আমরা জেলেদের সাথে তাদের ছোট একটা নৌকাতে ৯ জন পার হয়েছিলাম নৌকাতো ডুবে ডুবে অবস্হা আল্লাহ আল্লাহ করে পার হয়েছি

নিঝুমদ্বীপে পা রাখলেই দেখতে পাবেন সবুজ বিস্তীর্ন মাঠ । এই মাঠৈই আমাদের সাথে এই অতিথির সাক্ষাত হয়েছিলো



না ভাই এখনো পৌছেনাই ;)এবার নিঝুমদ্বীপের নামারবাজার যেতে হবে অর্ধেক রিকশায় অর্ধেক হেটে ,রিকশা প্রতি ৬০-৭০ টাকা করে নিবে তারপর এক থেকে দেড়ঘন্টা হাটতে হবে

নিঝুমদ্বীপে থাকার জন্য সরকারি একটা রেষ্ট হাউজ যেটার এখন আর বেইল নাই আর একটা মসজিদ বোর্ডিং আছে

আমরা মসজিদ বোর্ডিং এ ছিলাম ৪ জন ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়েছি দুই রুমে ছিলাম ।

আর সরকারি রেষ্ট হাউজে কোন লোক ছিলোনা তাই বলতে পারছিনা এটার কি অবস্হা :((

আমরা তাড়াতাড়ি মসজিদের পুকুরে গোসল সেরে পাশের একটা হোটেলে খেতে গেলাম সামুর অনেকের পরার্মশ মতো প্রতিটি জিনিসের দাম জিজ্ঞাস করে খেয়েছি তবে দাম কমই মনে হলো কোন ধরনের বাটপারি বা কোন কিছুই আমাদের স্পর্শ করে নাই তবে দামদর করে সবকিছু করা ভালো সাবধানের মাইর নাই

মোটা চালের ভাত খেয়ে দুইটা পিচ্চি বাচ্চাকে গাইড হিসেবে নিয়ে দিলাম রওয়ানা হরিন দেখতে ;)


সাথে একটা নৌকাও নিলাম কারণ বনের চারদিকে খাল আমাদের চিন্তা খালে খালে ঘুরবো আর নৌকা থামিয়ে বনে ঢুকবো ।

বনের মধ্যে এক জায়গায় নৌকা থামিয়ে ঢুকে গেলাম বনে হাটতে হাটতে হঠাৎ দেখা পেলাম হরিনের । হরিণ দিলো ভো দৌড় একবার দেখে তৃষ্ঞা মিটেনি তাই আবার খুজতে লাগলাম হরিণ এমনি করে অনেকবার হরিণ পেলাম প্রতিবারই দেয় ভো দৌড়

বনের ভিতরে নাদুস নুদুস কুত্তা ;) দেখতে পাবেন গাইড বললো এই কুকুর গুলো হরিণের মাঙশ খায় আবার মানুষকে দৌড়ানিও দেয় ।আমরা ভাবলাম এত বড় সাহস আশরাফুল মাখলুকাততে দৌড়ানি দেয় কুত্তায় X(( এবার আমরা হাতে লাঠি নিয়ে দিলাম দৌড়ানি কুত্তাকে :)


বনের ঠিক পশ্চিমে মেঘনার কুল ঘেষে বিচ টাইপ সবুজ একটা মাঠ আছে এই জায়গাটায় গেলাম একদম সন্ধ্যার দিকে গিয়ে বুঝতে পারলাম আরো আগে আসার দরকার ছিলো জায়গাটা আসলেই অসাধারন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে ছবিও উঠাতে পারি নাই :((

সন্ধ্যার ৭ টা পযর্ন্ত ঘুরেফিরে ণৌকা নিয়ে ঘুরে ফিরে আসলাম মসজিদ বোর্ডিং

রাতের দিকে ধুমসে খাওয়া দাওয়া করলাম প্রতিজন তিনপিস করে তিনরকমের মাছ সাথে মাছের ডিম ।

রাতের দিকে বাজারে যাওয়ার পর একজন জেলে এসে বললো তারা সকাল ৭ টায় মাছ নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে আমরা যদি চাই তাদের সাথে যেতে পারি আমাদেরকে তারা নলছিড়া বা তমুরুদ্দিন ঘাটে নামিয়ে দিতে পারবে এজন্য দিতে হবে ৫০০ টাকা আমরা বললাম ভেবে দেখি আপনাকে আমরা জানাবো তার কিছুক্ষণ পর মসজিদের সভাপতি সাহেব এসে বললো উনি উনার শাশুড়িকে নিয়ে কাল সকালে নোয়াখালি যাবে আমরা যদি চাই উনার সাথে ট্রলারে যেতে পারি উনি ট্রলারে করে তমুরুদ্দিন যাবে তারপর সকাল ৭ টার সীট্রাকে চেয়ারম্যান ঘাট উনি রওয়ানা দিবেন রাত ৩ টায় ,রাতের বেলা নৌকা নিয়ে মেঘনাতে মজা হবে এইটা ভেবে আমরা রাজি হয়ে গেলাম কিন্তু জোয়ার ভাটার পাল্লায় পড়ে ৩টার ট্রলার ছাড়লো সকাল সাড়ে পাচটায় ।সকালের মেঘনার কুলে সুর্য উঠা আসলেই সত্যিকারের সুন্দর বিস্তৃত জলরাশির মাঝে আমাদের নৌকা আস্তে আস্তে সূর্য উঠছে ............উফ কিছু বলার নাই

আর আমাদেরকে নামিয়ে দিলো জাহাজমারা সেখান থেকে গেলাম নলছিড়া সকাল ১০টার সীট্রাকে চেয়ারম্যান ঘাট তারপর কুমিল্লা


আমরা চারজন গেলাম একদিন মাঝে একদিন থাকলাম এর পরের দিন ফিরে আসলাম মোট খরচ হয়েছে ১৭০০ টাকা করে তবে আমরা প্রতিজন ২৫০০ টাকা করে নিয়ে গিয়েছিলাম।

কিছু তথ্য

**মসজিদ বোর্ডিং এ কিছু রুমে কারেন্ট আছে কিছু রুমে মোমবাতির ব্যবস্হা তবে মোবাইল চার্জ দিতে মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেবের রুমে অথবা খাবার হোটেলে দিতে পারবেন খাবার হোটেলে দিতে টাকা লাগতে পারে

**খাবার খাওয়ার জন্য মসজিদের বাম পাশের প্রথম হোটেলটাতে যেতে পারেন বুড়া একটা লোক এটার মালিক ,রান্না এবং ব্যবহার দুইটাই ভালো ।

**আসার সময় মাছ ধরার ট্রলারে আসবেন নতুন অভিজ্ঞতা সাথে টাকাও বাচবে আবার ঝামেলাও কমবে ।


**যারা লন্ঝে ঢাকা যাবেন বা আসবেন তাদের সবকিছু হাতিয়ার তমুরুদদিন ঘাটে হাতিয়ার নলছিড়া ঘাটে হলো যারা সড়ক পথে আসবেন তাদের কারবার ।

**যাবার আগে অনেকেই নিঝুমদ্বীপের দরদাম না করলে ভেজালে পড়বেন বলেছিলো তবে আমরা নুন্যতম ভেজালে পড়িনি সবকিছুই দরদাম করেই খেয়েছি কোন কিছু অতিরিক্ত মনে হয়নি

**নিঝুমদ্বীপে পা রাখার সাথে সাথে কিছু ছোট বাচ্চা আপনাদের গাইড হতে চাইবে তাদের যেকোন একজন/দুইজনকে সাথে নিয়ে নিবেন তাহলেই হবে এখানে সেখানে গাইডের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করার দরকার নাই তাহলে টাকা বেশি লাগবে কিন্তু গাইড এইসব ছোট বাচ্চাদেরকেই দিবে নিঝুমদ্বীপের গাইড এইসব বাচ্চা পুলাপাইন গাইডকে ৫০ টাকা করে দিলেই হবে এর বেশি দেওয়াটা আপনার ব্যাপার ।

**হোটেল ভাড়া প্রতি জন ১০০ টাকা করে পড়বে ।

**মোটা চালের ভাত পছন্দ না হলে বা স্পেশাল কিছু খেতে চাইলে হোটেলে বললেই উনারা রান্না করে দিবে তবে দামদর করে নিবেন আগে থেকেই ।

**সীট্রাক কোন কোন সময় ছাড়ে তা জেনে নিবেন স্হানিয় লোকজনের কাছ থেকে ।

**নোয়াখালির কিছু লোক হারামি টাইপ এদেরকে সুযোগ দিবেন না বা কমদামে পেয়ে গদগদ হয়ে যাবার দরকার নাই

মেগা পোস্ট দিয়ে দিয়েছি তারপরও যদি কোন কিছু জানার থাকে জিজ্ঞাস করুন আমিতো আছি নাকি ?

5 comments:

rakib said...

darun laglo..onek donnobad

Md Mamun said...

আসাধারন লিখেছেন মামুন ভাই। যা যা জানার দরকার ছিলো তার সব ইনফরমাশনই দিয়ে দিয়েছেন এখন যেতে সাহস পাচ্ছি। ইনসাআল্লাহ একদিন যাব।

Anonymous said...

HATIA thake nijhum dip jabar upay ki?

Hassan said...

চমৎকার লিখেছেন ভাই।

SHAKIL said...

অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিঝুমদ্বীপ যাওয়ার আগে যতো তথ্য জানার ছিলো সব তথ্যই আপনার পোস্টে পেয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন