টাঙ্গুয়ার হাওরের নীল পানির রাজ্যে ......ভ্রমণ ব্লগ

বিস্তৃর্ণ জলরাশি শুধু আমাকেই নয় আমার ধারণা প্রতিটি মানুষকেই প্রচন্ডভাবে আকর্ষণ করে,হাওর এলাকা হচ্ছে তেমনই এক বিস্তৃর্ণ জলরাশির জায়গা  যা মানুষকে খুব বেশি করে আকর্ষন করে ।

আমাদের দেশ বাংলাদেশে হাওর বাওড়ে ভরপুর তার মাঝে সুনামগন্জের টাঙ্গুয়ার হাওর হলো সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়ও বটে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে ।


পানির রাজ্য টাঙ্গুয়ার হাওর ,দুরে ভারতের মেঘালয়


অপরুপ সৌন্দর্য্যের টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে।  ছোট খাট ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর  । প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ ,জলজ উদ্ভিদে ভরপুর এই হাওর

পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ গ্রামগঞ্জ ও কৃষিজমি , স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত

কোন এক ভরা জোছনার রাতে হাওর বিলাসের স্বপ্ন নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম সুনামগন্জের উদ্দেশ্যে ভোর ছয়টায় বাস আমাদের নামিয়ে দিলো সুনামগন্জের আব্দুজ জহুর সেতুর উপরে :)

আব্দুজ জহুর সেতু 
পর্যটকদের কারণ এখন সেতুর উপরে সকাল থেকেই সিএনজি ট্যাক্সি আর মটরসাইকেলের সমাগম ঘটে ,এখান থেকে জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকায় চলে যেতে পারবেন তাহেরপুর উপজেলায় :) আমরা ১০ জন একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে গেলাম তাহেরপুর উপজেলায় ,বাজারে নাস্তা সেরে নিলাম :)

নাস্তা সেরে নৌকাতে উঠার পালা ,আগে থেকেই যোগাযোগ করে আমরা একটা নৌকা ঠিক করে রেখেছিলাম চিন্তা নিবেন না বাজারে সবসময়ই নৌকার মাঝিরা পর্যটকদের জন্য বসে থাকে তাই আগে থেকে ঠিক না করে গেলেও কোন টেনশন নেই :) দেখে শুনে ..শুনে দেখে যেকোন নৌকা ঠিক করে নিতে পারবেন :)
আমাদের নৌকা ,উপরে বসে হাওর দেখবেন আর নীচে ঘুমানোর ব্যবস্হা

নাস্তা সেরে নৌকাতে উঠে গেলাম ....নৌকা যখন হাওরে প্রবেশ করলো দু পাশে যেন শুধুই পানির রাজত্ব...দুরে বহুদুরে পর্যন্ত দিগন্ত জোড়া জলরাশি ....সে এক অন্য রকম মুহুর্ত ..সবাই গান ধরলাম "" তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবো রে ...তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবোরে ....



তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিয়ে আমরা তীরে মানে মাঝির বাড়ীতে এসে পৌছালাম ,দুপুরে খাবার জন্য কিছু বাজার সদাই করে রেখেছিলাম যা মাঝির বাড়ীতে রান্না হবে :) বাজার সদাই মাঝির বাড়ীতে রেখে চলে গেলাম হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের নীচে পানিতে লফ্ফ জফ্ফ করতে :) হাওরে আসবো আর জম্পেশ পানিতে লাফালাফি হবেনা তা কি হয় বলুন ?

হাওরে গোসল

যেখানে গোসল করেছিলাম গোসলের পরে ওয়াচ টাওয়ারের উপরে থেকে ফটোশুট
ওয়াচ টাওয়ারের সাথেই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট সাদৃশ্য চমৎকার এ জায়গাটিতে আপনি ছোট ছোট নৌকা করে ঘুরতে পারবেন । ছবি তারেক মাহমুদ

গোসল করে উঠার পর পেট বাবাজি ক্ষুধার কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলো তাই আমরাও দ্রুত ছুটলাম মাঝির বাড়ির দিকে ,গিয়ে দেখি আমাদের দুপুরের খাবার ভাত ডাল আলুভর্তা আর মুরগীর মাংশ রেডি :)

জম্পেশ একটা খাওয়া দিয়ে এবার ছুটলাম টেকেরঘাটের উদ্দেশ্যে ,টেকের ঘাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো টেকেরঘাটের লেক আর একদম সীমান্ত বর্তী পাহাড়ী এলাকা :)

টেকেরঘাট লেক ,নীল পানি আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে এই লেকটি আপনাকে মুগ্ধ করবেই
টেকেরঘাটে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা ,তবে সাবধান বিডিআরের অনুমতি ছাড়া যাবেন না 

সন্ধ্যার পর রাতের খাবার খেয়ে নিলাম টেকেরঘাট একটা হোটেলে ,তারপর আবার মাঝির বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা কারণ মাঝির বাড়ীর পাশের হাওর থেকেই ভরা জোছনা ভালোভাবে উপভোগ করা যাবে ।

নৌকাতে কাটানো সেই রাতটা স্মরণীয় একটা রাত ছিলো ,আকাশে চাঁদ ,হালকা মৃদু বাতাস সামনে বিস্তৃর্ণ  জলরাশি , সেই অনুভুতিটা কোনদিনও সঠিকভাবে বুঝানো যাবেনা এমনকি মুন্নি সাহা আসলেও :p

হেডফোনে গান আর সামনে দিগন্তজোড়া হাওরে জোছনার আলোতে স্বর্গীয় রাতটা নৌকার ছাদেই কাটিয়ে দিলাম :)

সকালে উঠেই মাঝির বাড়ীর রান্না খেয়ে হাওর দেখতে বের হয়ে গেলাম ....নৌকা নিয়ে পানির রাজ্যে হারিয়ে গেলাম আমাদের গন্তব্য ভারত সীমান্তবর্তী বারিক্কা টিলা আর যাদুকাটা নদী :)

টাঙ্গুয়ার হাওর :)

হাওর


আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনই রুপ লাবণ্যে নিজেকে ফুটিয়ে তুলে টাঙ্গুয়ার হাওর
মাঝির বাড়ী থেকে প্রায় তিন ঘন্টা হাওরের মাঝ দিয়ে হাওর বিলাস করে আমরা পৌছালাম যাদুকাটা নদী আর বারিক্কা টিলা ।

এটা হচ্ছে বারিক্কাটিলা ,এর পিছনের নদীটাই হলো যাদুকাটা যদি আর পিছনের পুরো অংশ কিন্তু ভারত


যাদুকাটা নদী :)
 (ছবিটি সংগৃহীত নেট থেকে ,কোন ভাই যদি এ ছবি তুলে থাকেন তাহলে কমেন্টস করুন ক্রেডিট যোগ করে দিবো )



বারিক্কা টিলাতে ঘুরে যখন সবাই ক্লান্ত তখনই শুরু হলো যাদুকাটা নদীর শীতল পানিতে নিজেকে শীতল করার জন্য সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো পানিতে ।

তারপর মাঝি আমাদের প্রায় আধাঘন্টার পথ মিয়ারচরে নামিয়ে দিলো সেখান থেকে সিএনজিতে করে চলে আসলাম সুনামগন্জ :)

আসার সময় সিলেটের বিখ্যাত রেষ্টুরেন্ট পানসীতে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া করার পর হাওরের সব মধুর স্মৃতিগুলো মাথায় নিয়ে রাতের বাসে উঠলাম পড়লাম :) নিজ গৃহে যেতে হবে যে :)


এবার আসুন ট্যুরের ব্যাপারে কিছু তথ্য শেয়ার করি :

# ঢাকা থেকে রাতে শ্যামলী আর এনা সরাসরি সুনামগন্জ যায় ভাড়া ৫৫০ টাকা ভোর ৬ টায় নামিয়ে দিবে ,বলবেন আব্দুজ জহুর সেতুর উপর নামিয়ে দিতে ,এখান থেকে ট্যাক্সি /সিএনজি বা মটরসাইকেলে সরাসরি তাহির পুর চলে যেতে পারবেন ভাড়া পড়বে প্রতিজন ৭০-৮০ টাকা ।

# তাহিরপুর থেকে নৌকা ভাড়া নিজের সুবিধামত যেকোন সময়ের জন্য নিতে পারবেন ,আমরা দুইদিন এক রাতের জন্য নিয়েছিলাম প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা হিসেবে মোট ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে ।।

# চাইলে নিজেরা বাজার করে মাঝিকে দিলে সে তার বাড়ীতে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্হা করবে :) এছাড়া টেকেরঘাট এবং বারিক্কাটিলা দুই জায়গায় হোটেল পাবেন সেখানেও খাবারের ব্যবস্হা করতে পারবেন :)

# প্রতিটা নৌকাতে ১০-১২ জন রাতে থাকতে পারবেন এছাড়া থাকার জন্য মাঝির বাড়ীর পাশেই হোটেল আছে হাওর বিলাস নামে ওখানেও থাকতে পারেন যদি প্রয়োজন হয় ।। তবে রাতে বৃষ্টি না হলে অধিকাংশরাই দেখা যায় নৌকার ছাদে ঘুমাতে পছন্দ করে :)

# ফিরে্ আসার দিন বারেক্কা টিলা থেকে মিয়ারচর নেমে যেতে পারেন তারপর সিএনজিতে ৬০-৭০ টাকা নিবে সুনামগন্জ পর্যন্ত :)


সর্বশেষে আমার হাওর নিয়ে খন্ড খন্ড ভিডিওচিত্রটি দেখে নিতে পারেন 

সবইতো জানলেন তা যাচ্ছেন কবে ?

কোন তথ্য বা পরামর্শ দরকার হলে কমেন্টস করুন অথবা আমাকে ফেইসবুকে নক করতে পারেন  অথবা আমার ভ্রমণ গ্রুপ  WE Travelers এ যোগ দিতে পারেন

আমি আসলে তিনবার হাওরে গিয়েছি ,আরও ছবি দেখতে আমার এ্যালবামগুলো দেখতে পারেন প্রথম এ্যালবাম ,দ্বিতীয় এ্যালবাম,তৃতীয় এ্যালবাম



17 comments:

Masudur Rashid said...

ব্যাপক হইছে মামুন ভাই, আপনার মতন ভ্রমন পাগলা হইতে মন চায়, কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লাদিয়ে পারি না। তবে সামান্য ঘোরার সুযুগ এলে আমি হাত ছাড়া করি না।

ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। জীবনে কখনো যদি এই হাওরে যাবার সুযোগ হয় তখন আপনার এই আবার পড়ব। :)

Anonymous said...

(y)

Unknown said...

যাওনের লোভ লাগছে খুব অনেক আগেই ছবি দেইক্ষা... এই বার ত এইডা পইরা আর ভাল-লাগতেসে না।। কবে যে সুযোগ পামু্‌......

Nazmul Haque Palash said...

এইবার-ও নিলেন না সাথে :(

Unknown said...

দারুণ পোস্ট !

Billah Mamun said...

পলাশ ভাই নেক্সট ট্যুরে ইনশাল্লাহ @পলাশ ভাই

Billah Mamun said...

ধন্যবাদ @ রাফি

Md. Billal Hossain Saif said...

আমার কাছে খুব রোমান্তিক লাগলো

Anonymous said...

এত সুন্দর জায়গা সেটা আগে জানতাম না, নেক্সট ট্যুর এখানে, ভাল ভাল ছবি শেয়ার দিছেন ভাই। ধন্যবাদ অনেক

Anonymous said...

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য! আমার ছোট্ট একটা জিজ্ঞাসা আপনার কাছে, একদিনে টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, বারিক্ক টিলা ইত্যাদি ঘুরে আসা সম্ভব কিনা। মানে বলতে চাইছি, যে কোন শুক্রবার ভোরে পৌছে সারাদিন ঘুরে ঐদিন রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিতে পারবো??

Unknown said...

সাঁতার জানি না!

Masrur said...

দুর্দান্ত!

Unknown said...

Nice place...

shobuj said...

ভালো লিখেছেন, চালিয়ে যান :)

Unknown said...

অনেক সুন্দর হয়েছে। নাইস!

জায়গা+থাকার ব্যাপার পুরোপুরি নিরাপদ? বছরের কোন সময় গেলে খুব ভাল হয়?

Writer Dude said...

২৬ তারিখ যাইতেছি ভাই ✌✌

Faisal said...

দেশের মধ্যে এমন সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জায়গা ভাবাই যায় না।। চোখ জুড়ানো। নয়নাভিরাম

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন