সমুদ্রের টানে কুয়াকাটায় ........কুয়াকাটার গল্প

সারাবছর এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলেও মার্চ মাসের জন্য প্রতিবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কারণ একটাই, এই মাসটাতে আমাদের একটা ঘুরাঘুরি  ফিক্সড থাকে তা হলো সমুদ্র অভিযান ।

আমার কেন জানি এক জায়গা বার বার দেখতে ইচ্ছা হয়না ,আমার নতুনত্ব ভালো লাগে নতুন কিছু দেখতে ইচ্ছা হয় । । গত বছর সেন্টমার্টিন আর কক্সবাজার যাবার কারণে এ বছর সমুদ্র দেখা যায় এমন নতুন কিছু খুজতেছিলাম ,আর স্বভাবতই কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিনের পর কুয়াকাটার নামটা সবার আগে আসে ।  যোগাযোগ ব্যবস্হার কারণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত স্পটলাইটে এসেছে খুব কম তারপরও কুয়াকাটা ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত প্লান সবাইকে জানালাম পুলাপাইনও এক পায়ে খাড়া এবার সমুদ্র অভিযান হবে কুয়াকাটাতে ।


কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হলো দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায় । কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্হিত ।

কিভাবে যাবেন কুয়াকাটা :

অনেকেই মনে করেন কুয়াকাটা যেতে ঝামেলা অনেক, রাস্তাঘাট খুব খারাপ ,বিশ্বাস করুন এ অবস্হার পরিবর্তন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে গেছে আর আগের মতো ৬ টা ফেরি পার হতে হবেনা এখন ফেরি ৪ টা আর এই চারটার মাঝে ৩টার উপরে ব্রীজ নির্মাণ আশা করা যায় আগামী বছরের মাঝে শেষ হয়ে যাবে । ফেরি ছাড়া বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১০০ কিলো রাস্তা একেবারে ঠিকঠাক । 

কুয়াকাটা দুইভাবে যাওয়া যায় বাসে এবং লঞ্চে । বাসে যারা যেতে চান তারা ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটা চলে যেতে পারবেন সাকুরা অথবা বিআরটিসির বাস দিয়ে যেতে সময় লাগবে ১২/১৩ ঘন্টা ।

কিন্তু বাসে যারা যায় তারা বোকার দল ,এত মজার লঞ্চ জার্নি মিস করা বিশাল বোকামি । সন্ধ্যার লঞ্চে উঠবেন সারারাত বিশাল সমুদ্র আর আকাশে চাদ দেখতে দেখতে কখন সকাল হয়ে যাবে বলতেই পারবেন না ।
লন্ঝের ছাদে আমরা 

লঞ্চে করে যেতে আমার পরামর্শ সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে বরিশালের লঞ্চে না উঠে ,উঠবেন পটুয়াখালীর লঞ্চে এতে আপনি বরিশাল থেকে ৪০ কিমি এগিয়ে যেতে পারবেন কুয়াকাটার দিকে এতে একটা ফেরি পার হবার ঝামেলা থেকে বাচবেন ,কারণ বরিশাল থেকে কুয়াকাট পাক্কা ১০০ কিমি আর পটুয়াখালি থেকে ৬০ কিমি । সন্ধ্যা সাড়ে পাচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো সদরঘাট ত্যাগ করা শুরু করে । আমরা গিয়েছিলাম এমভি সাত্তার খান নামক লঞ্চ দিয়ে এটা প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়  ছাড়ে । বেশ ভালো লঞ্চ সকাল সাতটায় আমরা পটুয়াখালি পৌছে গিয়েছিলাম । 


নীচতলার ডেকে বসে ধুমছে আড্ডা চলছে সাথে গান আর চন্দ্রদর্শন 
সকালে লঞ্চ থেকে নেমে হরতালের কারণে আমরা প্রথমে অটো রিক্সা তারপর মটরসাইকেলে করে কুয়াকাটা পৌছে গিয়েছিলাম । আপনাদেরকে ভালো বুদ্ধি দেই শুনেন যদি সাথে মেয়েলোক  না থাকে তবে পটুয়াখালী নেমে টেক্সি বা বাসে করে চলে যাবেন কলাপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত । তারপর নৌকা করে পার হয়ে যাবেন ফেরিঘাট তারপর ফেরিঘাট পার হলেই দেখবেন অনেক মটরসাইকেল এরা চুক্তিতে এখান থেকে সরাসরি কুয়াকাটা নিয়ে যায় প্রতি মটরসাইকেল ২৫০ টাকা প্রতি মটরসাইকেলে চালকসহ ৩ জন বসতে পারে । এতে খুব সহজে জ্যাম এবং ফেরীঘাট পারাপার হতে যে এক্সটা সময় লাগে এর যন্ত্রণা থেকে বেচে যাবেন ।  আর যারা বরিশাল থেকে যাবেন তারা সরাসরি কুয়াকাটার বাসে উঠে যান এটাই ভালো হবে ।

ফেরীঘাটে আমরা 
কুয়াকাটাতে বীচ লাগোয়া অনেক হোটেল পাবেন ,ভাড়া মোটামুটি কমই দেশেশুনে একটাতে উঠে যেতে পারেন ।বীচের পশ্চিমদিকে কিছু ভালো হোটেল পাবেন দেখতে  পারেন ।

কুয়াকাটা সীবিচ .....

সন্ধ্যায় কুয়াকাটা সীবিচ


ভরা পূর্নিমায় বীচে আমরা 


কি টেনশনে পড়ে গেছেন জিনিসটা কি ? এগুলো কাকড়া ,কুয়াকাটাতে পাবেন সবচেয়ে সুস্বাধু কাকড়া । আমরা মোট ১৫ টা কাকড়া
ভাজা করে সস আর পেয়াজ দিয়ে খেয়েছিলাম ...স্বাদটা এখনো মুখে লেগে আছে  ..

আমাদের দলকে মটরসাইকেলে তাও আবার বীচে দেখে অবাক হচ্ছেন ,অবাক হবার কিছুই নেই  কুয়াকাটাতে  এমন মটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় যারা আপনাকে নিয়ে বের হবে কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা ঘুরে দেখানোর জন্য যেমন গঙ্গামতির চর ,সূর্যোদয় ,কুয়াকাটার কুয়া ,বৌদ্ধ মন্দির ,লেবুর চর,কাকরার চর সহ আরও কিছু  দর্শনীয় জায়গা । কুয়াকাটা গেলে অবশ্যই মটরসাইকেল করে বীচ ঘুরে দেখবেন বেশ মজা পাবেন । প্রতি জন ২০০ টাকা করে খরচ পড়বে ।


কুয়াকাটার সুর্যোদয় । এটা গঙ্গামতির চর থেকে দেখা যায় । 
লাল কাকড়া দেখতে লাল কাকড়ার চরে ,যদিও কাকড়া সমাজ আমাদেরকে দেখে  গর্তে লুকিয়ে গেছে

লাল কাকড়ার চর থেকে বের হয়েই চোখে পড়লো তরমুজ ক্ষেত কি আর করা সবাই নেমে গেলাম ক্ষেতে , একেবারে ক্ষেতে বসে  পেট পুরে সবাই তরমুজ খেলাম
বৌদ্ধমন্দিরের পাশের কুপে আমরা
শুটকি পল্লী ,নানা ধরনের শুটকি শুকানোর প্রক্রিয়া এখানে দেখতে পাবেন ।
বলেনতো আমার হাতে এটা কি ?
লাল কাকড়ার চর
ফাতরার চরগামী কাকরার চরে অবশেষে একটা লাল কাকড়া ধরতে পারলাম 

ভালো করে খেয়াল করুন এটা লাল কাকড়ার চর অসংখ্যা লাল কাকড়া দেখা যাচ্ছে
ফাতরার চরগামী লাল কাকরার চর


ফাতরার বনের ভিতরে ,এটা কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে ১ ঘন্টার রাস্তা । ফাতরার বনটা আসলেই সুন্দর সামান্য কিছু বন্য প্রানীও আছে ।

কুয়াকাটা একদিন দেখার পর পরের দিন আমরা ফাতরার বনে গিয়েছিলাম সেখানে রাতে ক্যাম্পিং করে বনে রাত কাটিয়েছি । ফাতরার বনে ক্যাম্পিং নিয়ে আরেকটা আলাদা পোস্ট লিখবো ,সে পোস্টে ফাতরার বন সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে ।


কিছু টিপস :


 # লঞ্চের ভাড়া প্রতি মাথা ৩২০ টাকা করে আর কেবিন ১২০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত । আমরা একটা কেবিন নিয়েছিলাম ১৮০০ টাকা দিয়ে ,প্রতি কেবিনে দুইজন পর্যন্ত থাকতে দেয় আর বাকীদের জন্য প্রতিজন ১০০/১৫০ টাকা করে এক্সটা দিতে হয় । আমরা ১৫ জনের জন্য কেবিনসহ মোট ভাড়া দিয়েছিলাম ৩০০০ টাকা ।  এছাড়া দুই /তিনতলার ডেকে চাদর বিছিয়ে আরাম করে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারবেন । স্টুডেন্ট ছাত্র মানুষ এত টেকা নাই হাবিজাবি বলে অনেক ভাড়া কমানো যায় :p

# তারিখ যদি একটু এদিক সেদিক করে ভরা পূর্ণিমাতে সমুদ্রে দর্শনে যাওয়া যায় তাহলে লঞ্চে এবং সীবিচে রাতের বেলা অসাধারণ পরিবেশ পাবেন, কবে কবে ফুল মুন তা জানতে এই লিংকটি দেখুন 

#ফেরার সময় কুয়াকাটা থেকে সরাসরি বাসে বরিশাল চলে যেতে পারেন সন্ধ্যার পরে অনেক ভালো ভালো লন্ঝ পাবেন ঢাকা আসার ,কুয়াকাটা থেকে বরিশাল ৫ ঘন্টার রাস্তা । এছাড়া পটুয়াখালি /আমতলী থেকেও লন্ঝে উঠতে পারেন তবে সেজন্য একটু খোজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন কখন লন্ঝ ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে

#ফাতরার বনে যাবার জন্য প্রতিজনের খরচ ২২০ টাকা

#কুয়াকাটাতে খাবার দাবার বেশ ভালো ,হোটেলে অর্ডার করলে তারা চাহিদামত সবকিছুর ব্যবস্হা করে দেয় 

#যেখানেই যান দয়া করে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করবেন না এটা একটা রিকোয়েস্ট 

আর কিছু জানার জন্য কমেন্টস করতে পারেন অথবা আমাকে ফেইসবুকে নক করতে পারেন 


14 comments:

Anonymous said...

ভালো লাগল

Anonymous said...

Khub valo liksos.... jara gurte Aggrohi tader kaje dibe.....

Anonymous said...

thanks

Unknown said...

লেখাটি ভালো লাগলো!

Unknown said...

লেখাটি ভালো লাগলো!

Unknown said...

thanks a lot for the tips and tell

Anonymous said...

Valo hoyese

Anonymous said...

চমৎকার পোস্ট।

Anonymous said...

ফাতরার বন এ বা কাকড়ার চর এ যেতে কাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে ?

Anonymous said...

ferar pothe koitar somoy rowna deya better kuakata theke?

Billah Mamun said...

বিচের সাথেই ট্যুরিজম এর অফিস আছে দেখবেন ওদের সাথে কথা বললেই হবে ,ফেরার সময় কুয়াকাটা থেকে সরাসরি বাসে বরিশাল চলে যেতে পারেন সন্ধ্যার পরে অনেক ভালো ভালো লন্ঝ পাবেন ঢাকা আসার ,কুয়াকাটা থেকে বরিশাল ৫ ঘন্টার রাস্তা । এছাড়া পটুয়াখালি /আমতলী থেকেও লন্ঝে উঠতে পারেন তবে সেজন্য একটু খোজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন কখন লন্ঝ ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে

sadia meaow said...

বহুত তথ্যও দিয়ে রাখসেন দেখি।
ভবিষ্যতে কাজে দিবে ভালই। ;)

Sajib said...

Jabar age amake jananor kotha silo :(

Anonymous said...

ওয়াও, অনেক অসাধারণ লেগেছে পোষ্টটি! অনেকেরই পছন্দের জায়গা। বরিশাল ট্যুর নিয়ে আরও কিছু মজার তথ্য http://bit.ly/2asIVZE

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন