নিঝুম রাতে কুয়াকাটার ফাতরার বনে ক্যাম্পিং .......


"ফাতরার বন " নাম শুনে ভিমড়ি খাওয়ার মতো দশা কারণ আমাদের এখানে স্হানীয়ভাবে ফাতরা মানে একটু বখাটে টাইপের  ছেলেদেরকে বুঝানো হয় :( তারপরও  নামে নয় কাজেই পরিচয় এই সুশিল বক্তব্যে দীক্ষিত হয়ে আমরা রওয়ানা হলাম ফাতরার বন দেখতে এবং থাকতে ।

ফাতরার বন হলো কুয়াকাটা সংলগ্ন  সৌর্ন্দয্যে ভরপুর এক বন । ৯ হাজার ৯৯০ একর আয়তনের এই বনে ১৯৬৬ সালে বন বিভাগ বৃক্ষরোপন শুরু করে । দুই তিনটা মাত্র ফ্যামিলি এখানে বসবাস করে এছাড়া  বন্য শুকর শেয়াল সহ সামান্য কিছু বন্যপ্রানী আছে । পুরো বনটাই চারপাশে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা । এই বনের  আরেকটা নাম হলো "টেংরাগিরি "


ফাতরার বনে আপনাকে যেতে হবে কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো । রাস্তায় আপনি শুটকি পল্লী আর লাল কাকড়ার চর দেখতে পাবেন ,শুটকি পল্লী আর লাল কাকড়ার চরে অবশ্যই নামবেন,এই দুটি জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত কুয়াকাটা পোস্টে পাবেন 

আমরা ১৫ জনের দল ফাতরার বন শুধু দেখেই ক্লান্ত হইনি আমরা ফাতরার বনে রাতের বেলা তাবু গেড়ে ক্যাম্পিং ও করেছি । চলুন সেই গল্পটাই বলি ছবির সাথে সাথে

ফাতরার বন গামী আমাদের ট্রলার । আমরা পুরো একটা ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে নিয়েছিলাম । কুয়াকাটা বিচের সাথে  যেকোন দোকানে খোজ নিলেই ওরা বলে দিবে কোথায় ট্রলার এর ব্যাপারে কথা বলতে হবে 
ফাতরার বনে যেতে যেতে চারপাশে ঘন বন দেখতে পাবেন ,সুন্দরবন সুন্দরবন একটা ভাব পাবেন
ফাতরার বনের ভিতরে এমন রাস্তা পাবেন প্রতিটি রাস্তায় সমুদ্র উপকুলে গিয়ে মিশেছে


ফাতরার বনের ভিতরে এমন ঘন জঙ্গলও পাবেন 
ফাতরার বনে সমুদ্র উপকুলবর্তী দিক
সী লেভেল বাড়ার কারণে জোয়ারের তোড়ে গাছগুলোর অবস্হা দেখুন

অনেক খোজাখুজির পর অবশেষে আমরা ক্যাম্পিং এর জায়গা সিলেক্ট করা হয়েছে ,ক্যম্পিং এ জায়গা সিলেক্ট এর বেলায় লোকালয়ের আড়ালে নিরিবিলি জায়গায় করা ভালো এতে মানুষের ঝামেলা থেকে বাচা যায় এছাড়া পর্যাপ্ত বাতাস ,চুলা ,তাবুর ফ্লোরে আরাম করে শোয়া যাবে কিনা সবদিকে খেয়াল করে জায়গা সিলেক্ট করতে হবে । 
এইযে দেখুন আমাদের তাবু সেট করা হয়ে গেছে ,তাবু সেট করার পর আমাদের কাজ ছিলো বেলা থাকতে থাকতে পর্যাপ্ত লাকড়ি জোগাড় করে রাখা এবার আমরা বের হয়ে গেলাম লাকড়ি জোগাড় করতে ,বন ভর্তি লাকড়ি আর লাকড়ি তাই লাকড়ি জোগাড় করতে কোন সমস্যা হয়নি 
বিকালে মুড়ির আয়োজন 
সন্ধ্যার সাথে সাথে শুরু হয়েছে আমাদের রান্না বান্নার তোড়জোড় ...কেউ চুলা তৈরি করছে ,কেউ  চাল  রেডি করছে কেউ মাছ  ভাজার জন্য মসলা মিক্সিং করছে  
রান্না বান্না শুরু হয়ে গেছে ,আমাদের অভিজ্ঞ শেফ তানবীরের নেতৃত্বে  আমরা সবাই রান্নার কাজে  ঝাপিয়ে পড়েছি 
রাতের বেলা বন্ধু আড্ডা গান সবই হয়েছে এবার শরীর এলিয়ে দিতে হবে ,জোয়ারের পানি  আমাদের তাবু থেকে ছিলো মাত্র দশ হাত দুর ,গাছের উপরে যখন জোয়ারের পানি এসে আছড়ে পড়তো সে শব্দটা ছিলো একসাথে ভয়ংকর আবার উপভোগ করার মতোও 
রাত ১২ টায় সারপ্রাইজ ,আমরা বাজার করার সময় দুই কেজি কাকড়া কিনেছিলাম এবং সময়মতো সেগুলো কাটাকুটি করে ম্যারিনেট করে রেখে দিয়েছিলাম ,রাত ১২ টায় সেগুলো বসিয়ে দিলাম ভাজতে ,ভাজার পর সস আর পেয়াজ কুচি দিয়ে সবাই মিলে খেয়েছি । এত স্বাদের কাকড়া ভাজা মনে হয়না আর খেয়েছি ...স্বাদটা মুখেই লেখে আছে ...যদি কাকড়ার ব্যাপারে আগ্রহী হোন তবে কুয়াকাটা বাজারেই পাবেন কাকড়ার আড়ত সেখান থেকে পছন্দমতো কাড়কা কিনতে পারবেন ,১০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত কাকড়া পাবেন 
 ভোর হয়ে গেছে ,সকাল বেলা কিছু ছেলেপুলে তাবু দেখেতো অবাক ,আরে  জিনিসটা  কি আবার ভিতরে মানুষের  কথাও  শুনা যায় :p
এবার ফেরার পথ ধরতে হবে কিন্তু সারারাত যে আমরা ক্যাম্পিং করেছি তার কারণে সেখানে নানা ধরনের আবজর্না  জমা হয়েছে সেগুলো এক সাথে করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি যেন এইসব আবজর্না পরিবেশের কোন ক্ষতি না করতে পারে । বিভিন্ন  প্লাস্টিকের বোতল,পলিথিন বিশেষ করে যেগুলো সহজে ধ্বংস হয়না এ ধরনের আবজর্না অবশ্যই অবশ্যই পুড়িয়ে দিয়ে আসবেন । টুরিষ্ট স্পট এবং আশেপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমার এবং আপনার ।
ঘরে ফেরার পালা .........



ক্যাম্পিং করার জন্য কিছু দিক নির্দেশনা :

#ক্যাম্পিং করার জন্য মানসিক কিছু প্রস্তুতি বিশেষ জরুরি কারণ আপনি একটা অচেনা এলাকায় রাত কাটাবেন তাই যেকোন পরিস্হিতির সম্মুখিন হতে পারেন । যেখানে ক্যাম্পিং করার প্লান করবেন সে জায়গা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিবেন লোকালয় থেকে কিছুটা আড়ালে হলে শান্তি মত ক্যাম্পিং করা যায় ।

# তাবু কিনতে আপনি পিক ৬৯ এর ওয়েবসাইট দেখতে পারেন । দুই বা তিনজন উপযোগী তাবু কিনতে পারেন ,এছাড়া আজিজ সুপার মার্কেটে ভ্রমণ রিলেটেড এক্সেসরিজ এর একটা দোকান আছে গিয়ে দেখতে পারেন উনাদের কাছেও তাবু আছে । 

# আমরা ক্যাম্পিং যতবার করেছি খুব বড় দল নিয়ে করেছি (১৫ জন) তাই আমাদের খাবার আইটেমগুলো অন্যদের থেকে ভিন্ন ছিলো ,দল বড় বলে আমরা  সহজেই অনেক কিছু করতে পেরেছি সাধারণত ক্যাম্পিং এ মানুষ নুডলস এর মতো ঝামেলাবিহীন খাবার নিয়ে যায় ।  আপনি কি নিয়ে যাবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপর ,দল ছোট হলে বেশি জিনিস বহন করে নিয়ে যাওয়া বোকামি হবে ।

# ক্যাম্পিং করতে অবশ্যই জ্বালানীর উপরে বেশি গুরুত্ব দিবেন , এছাড়া ছোট টর্চলাইট /ল্যাম্প ,ছুরি ,কেরোসিন,প্রয়োজনীয় ঔষধ এগুলো অবশ্যই সাথে নিয়ে নিবেন ।

# যদি এমন জায়গায় ক্যাম্পিং করেন যেখানে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকে তাহলে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি অবশ্যই সাথে নিবেন

আর কিছু বলার মতো পাচ্ছিনা যদি কোন ব্যাপারে জানার থাকে তাহলে আমাকে নক করতে পারেন ফেইসবুকে ,যতটুকু সম্ভব সাহায্য করবো :)


আমরা প্রথম দিন ছিলাম কুয়াকাটা তারপর দিন ফাতরার বন কুয়াকাট নিয়ে ভ্রমণ ব্লগটি দেখতে পারেন এখানে 

5 comments:

valueless o constant said...

ফাতরার বনের ভ্রমনকাহিনিটা মোটেও ফাতরা(;-)) ছিলনা।পড়ে খুব ভালো লাগলো।খাবারের ছবিগুলো দেখে ও বর্ননা পড়ে জিহবায় লোল চলে এসেছে।বিশেষ করে কাকড়াভাজির লেখাটুকু বেশ রসালো লেগেছে।
শেষে ক্যাম্পিং পদ্ধতিটা পড়ে নতুন কিছু কিছু বিষয় শিখে নিলাম।
ধন্যবাদ মামুন ভাই।:-)

mahmud said...

Darun laglo vai. Security er kono somossa silona? Rtae vioy lageni b keu nished koreni okhane thakte?

Billah Mamun said...

@MahMud Vai ওখানে সিকিউরিটির কোন সমস্যা নাই তবে বন্য প্রানী ঝামেলা করে এমন কিছু ওয়ার্নিং আমাদেরকে দেওয়া হয়েছিলো ফরেস্ট অফিস থেকে তবে আমরা কোন সমস্যাই ফেইস করিনি । আপনি যদি দল বল নিয়ে করতে চান তাহলে বেস্ট হয় ওখানে ফরেস্ট অফিসার একজন থাকে উনার সাথে কথা বার্তা বলে সিকিউরিটির ব্যবস্হা করা তাহলে আর কোন চিন্তাই থাকলোনা ।

Anonymous said...

wonderful experience

Anonymous said...

অনেক সুন্দর, শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন