ভারতীয় ভিসার আদ্যোপান্ত : কিভাবে করবেন ? কি কি লাগবে ? কেন রিজেক্ট হতে পারে ।।

ভ্রমণ চিকিৎসা বা শপিং যাই বলেন ইদানিং বাংলাদেশ থেকে ভারত যাবার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ।।ভ্রমণের জন্য অবশ্য ভারত খুব বিখ্যাত, একটা কথা প্রচলিত আছে ভারত দেখলেই নাকি পৃথিবী দেখা হয়ে যায় ।।
শুধুমাত্র জানার অভাবে অনেকে মনে করে ভিসা করা এবং ভিসা পাওয়া মনে হয় খুবই কঠিন ,আসলে ব্যাপারটা এমন জটিল না আপনার কাগজপত্র সব ঠিক ঠাক থাকলে আপনাকে ওরা ভিসা দিতে কার্পণ্য করবেনা ।

যাই হোক সম্প্রতি আমার ভারতীয় ভিসা করার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি চলুন .....

প্রথমেই বলে দেই ভারতীয় সেন্টার রয়েছে 

ঢাকা (যমুনা ফিউচার পার্ক)
চট্রগ্রাম
সিলেট 
রাজশাহী
খুলনা 
ময়মনসিংহ
বরিশাল
রংপুর 
কুমিল্লা
নোয়াখালী

এক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো  যে যে বিভাগে বসবাস করেন তাকে সেই বিভাগেই আবেদন করতে হবে ,মানে বর্তমান ঠিকানা আপনার যে বিভাগে সেই বিভাগে আবেদন করবেন ।

ভিসার আবেদন করার জন্য দেশের কোথাও এখন আর ই টোকেনের প্রয়োজন হয়না ,সব কাগজপত্র নিয়ে রবি থেকে বৃহষ্পতি সকাল আটটা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত যেকোন সময় জমা দিতে পারবেন ।





ভিসার জন্য এম্বেসীতে  কি কি কাগজপত্র  নিয়ে যাবেন তার লিস্ট 

  • ভিসার আবেদনপত্র এর প্রিন্ট কপি (সাদাকালো বা রঙ্গিন যেকোন একটা হলেই হবে )

  • পাসপোর্ট এবং এর ফটোকপি (মেয়াদ সর্বনিম্ন ছয়মাস থাকতে হবে ) পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে সেটাও জমা দিতে হবে । পুরাতন পাসপোর্টের নাম্বার যদি নতুন পাসপোর্টে থাকে তবে অবশ্যই পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে যদি সেটা না থাকে সেক্ষেত্রে থানায় জিডি কপি জমা দিতে হবে না হয় ভিসা জমা নেয়না ইন্ডিয়ান এম্বেসী মনে রাখবেন :) 
  • ভারতীয় ভিসা সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের দুই কপি ছবি ২" বাই ২" (স্টুডিওতে বললেই ওরা বানিয়ে দিবে.এই ছবিগুলো পাসপোর্ট ছবি থেকে একটু ভিন্ন)
  • জন্মসনদ অথবা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি (আপনি যেটা দিয়ে পাসপোর্ট করিয়েছেন সেটা দিবেন ,না হয় রিজেক্ট হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে)
  • ঠিকানা প্রমাণের জন্য বর্তমান ঠিকানার সাম্প্রতিক গ্যাস বিল,পানির বিল,টেলিফোন বিল অথবা বিদ্যুৎ বিলের কপি যেকোন একটি । যাদের প্রিপেইড মিটার তারা মিটার কার্ডের উভয় পাশের ফটোকপি জমা দিলেই হবে।
  • ছাত্র হলে আইডি কার্ডের ফটোকপি আর চাকুরিজীবি হলে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট সংক্ষেপে NOC , এর কোনটা না হলে যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্যাড সংগ্রহ করে একটা নো অবজেকশন লেটার বানিয়ে নিবেন । তবে এক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আপনি পাসপোর্টে যদি স্টুডেন্ট দেন তাহলে আইডি কার্ড আর যদি প্রাইভেট সার্ভিস দেন তাহলে NOC দেওয়া ভালো ,আর ভিজিটিং কার্ড থাকলে সেটাও এ্যাটাচ করে দিয়ে দিবেন এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে ।
  • ডলার এন্ড্রসমেন্ট করতে হবে ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ ডলার (মানি এক্সচেন্জার থেকে করলে কিন্তু হবেনা ) ,এন্ড্রসমেন্ট করার পর একটা কাগজ দিবে সেটার ফটোকপি  অথবা আপনি আপনার বা আপনার বাবার ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে পারেন সেক্ষেত্রে বিগত ছয়মাস ধরে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা একাউন্টে থাকতে হবে । 
  • ভিসা ফী ৮৫০ টাকা যা এম্বেসির সামনেই  জমা দিতে পারবেন।



ছাড়া মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে মেডিকেল এর সবগুলো পেপারর্স জমা দিতে হবে ।।

এবার আমরা ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াতে যাবো 



যারা টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তারা https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/ এই লিংকে গিয়ে অনলাইন ভিসাতে ক্লিক করুন তারপর একে একে সবগুলো ঘর পাসপোর্ট অনুযায়ী নাম ধাম দিয়ে পুরণ করে ফেলুন ।

 ভিসার ক্ষেত্রে আপনি নিজেই বা পরিচিত কোন কম্পিউটার/ইন্টারনেটে দক্ষ কাউকে দিয়ে আবেদন করতে পারেন ,  আপনাকে নিজে নিজে আবেদন করার অনলাইন লিংক দিয়ে দিলাম ট্রাই করতে পারেন একদমই সহজ একটা কাজ অযথা দালাল ধরার কোন দরকারই নেই নিজে নিজে আবেদনের ক্ষেত্রে নির্দেশিকা ওয়েবসাইটে পাবেন অথবা  এখানে দেখে নিন 

এবার আপনার আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপিতে ছবি যুক্ত করে নিজের সিগনেচার দিয়ে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে চলে যান,মনে রাখবেন ভারতীয় ভিসা সেন্টারে  ভিড় থাকে তাই সকাল সকাল গেলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আসতে পারবেন । টুরিস্ট ভিসা সাধারণত ছয়মাস/একবছরের মাল্টিপল  ভিসা দেওয়া হয় এই সময়ের মধ্যে আপনি যতবার ইচ্ছা ততবার প্রবেশ এবং বাহির হতে পারবেন । 

ঢাকাতে ভিসা ডেলিভারি দিতে ৩-৭ দিন সময় লাগে আর ঢাকার বাইরে সাধারণত দুই তিন দিনের মাঝেই দিয়ে দেয় । আবেদন করার পর এখান থেকে আপনি আপনার ভিসা আবেদনের অবস্হা জানতে পারবেন । এম্বেসীতে কাগজপত্র জমা দিলে আপনাকে একটা টোকেন দেওয়া হবে আপনি অথবা যে কেউ এই টোকেনটা নিয়ে গেলেই পাসপোর্ট ভিসা দিয়ে দিবে ,অর্থাৎ ভিসা সংগ্রহের সময় আবেদনকারী না গেলেও চলবে তবে যে যাবে তার হাতে আপনার সাইন দেওয়া একটি আবেদন পত্র দিয়ে দিবেন যে আপনি জরুরী কাজে বা অসুস্হ এজন্য আসতে পারেননি । 

এছাড়া ভিসা সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে পাবেন 

এবার আসি সড়কপথে ভারত হয়ে কিভাবে নেপাল বা ভুটান যাবেন । প্রথম কথা হলো নেপাল বা ভুটানে যেতে আগে থেকে কোন ভিসা নেওয়া লাগেনা ওরা অন এরাইভেল ভিসা দেয় । ভারতের ভিতর দিয়ে নেপাল বা ভুটান যেতে হলে আপনাকে ভারতীয় এম্বেসী থেকে ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে ,আবেদন করার সময় ট্রানজিট ভিসা সিলেক্ট করে ভুটান /নেপাল যেদেশে যেতে চান তা বলে দিতে হবে । ট্রানজিট ভিসা আবেদন করার সময় আপনি কোন সীমান্ত দিয়ে নেপাল/ভুটান প্রবেশ করবেন এবং বের হয়ে আসবেন তা নির্ধারণ করে দিতে হবে যেমন ভুটানে ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে পোর্ট অফ এন্ট্রি এবং এক্সিট সিলেক্ট করতে হবে চ্যাংরাবান্দা/জাওগাও এক্ষেত্রে আপনি বিস্তারিত এখানে পাবেন  ।
ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় (৭২ ঘন্টা) পর্যন্ত ভারতে অবস্হান করতে পারবেন তারপর আপনাকে নেপাল বা ভুটান চলে যেতে হবে আবার ফিরে আসার সময়ও আপনি নির্দিষ্ট একটা সময় (৭২ ঘন্টা) ভারতে অবস্হান করতে পারবেন তারপর বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। অনেকে ভারতীয় মাল্টিপল ভিসা দিয়েও নেপাল ভুটান ঘুরে আসে তবে সেটা ঝুকিপুর্ণ

কি কি কারণে আপনি ভিসা রিজেক্ট খেতে পারেন 

প্রথম কথা হচ্ছে ভিসা দিবে না দিবে এটা পুরোপুরি ওদের উপরে নির্ভর করে ,ধরুন যিনি ভিসা দিবেন উনি একটু আগে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে আসছেন তাহলে আপনার কপালে খারাবি আছে :p

দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে আপনার কাগজপত্র ঠিক না থাকলে ওরা সরাসরি রিজেক্ট করে দেয় তাই কাগজপত্র আপ টু ডেট চেক করে দিবেন যেন নুন্যতম কোন ভুল না থাকে ।। ঢাকাতে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি বলে কাগজপত্রে কোন ভুল পেলে সরাসরি রিজেক্ট করে দেয় অন্য জায়গাগুলোতে ভুল হলে নির্দিষ্ট ফী দেওয়ার মাধ্যমে ঠিক করা যায় যেমন চিটাগাং এ আমার আবেদন পত্রে বাবার নাম ভুল ছিলো পরে আমাকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে এই ভুল ঠিক করার সুযোগ দিয়েছে তবে কিছু গুরুতর ভুল যেমন ফর্মে পাসপোর্ট নাম্বার ভুল এনআইডি নাম্বার ভুল এসব ক্ষেত্রে সরাসরি রিজেক্ট করে দেয় । টাকা দিয়েও ভুল সংশোধনের কোন সুযোগ থাকেনা 

তৃতীয় কারণটা হচ্ছে আপনি পাসপোর্ট করেছেন জন্মসনদ দিয়ে কিন্তু জমা দিয়েছেন ন্যাশনাল আইডি কার্ড এক্ষেত্রে রিজেক্ট করে দিতে পারে কারণ পাসপোর্ট করার সময় জন্মসনদ বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড  দেন এর একটা নাম্বার পাসপোর্টে থাকে তারা যখন নাম্বারটাতে মিল পায়না তখন রিজেক্ট করে দেয় ।। সাবধান ।।

তবে ভয় পাবেন না আশার বাণী হলো ভিসা খুব একটা রিজেক্ট হয়না ,কাগজ পত্র সব ঠিক থাকলে ভিসা দিয়ে দেয় :) ওরা আসলে আমাকে আপনাকে ভিসা দেবার জন্যই কিন্তু বসে থাকে :)

ভারত ভ্রমণে আরও কিছু টিপস 

ভারতে প্রবেশের সময় ভ্রমণ কর বা ট্যাক্স দিতে হবে ৫০০ টাকা এটা আপনি চাইলে আগে আগে সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে দিতে পারেন এক্ষেত্রে ভারত প্রবেশের সময় আর ঝামেলা করতে হবেনা ।

 ভারতে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ আপনাকে চেক করতে পারে যে আপনার নিকট অতিরিক্ত ডলার আছে কিনা ্ যত ডলার আপনার পাসপোর্টে এন্ড্রস করিয়েছেন এর উপরে ডলার  খুজে পেলে ইমিগ্রেশন ঝামেলা করতে পারে তাই  মানিব্যাগে অতিরিক্ত ডলার না রেখে ব্যাগের ভিতরে লুকিয়ে রাখুন ।।

এম্বেসীর ভিতরে ওরা কোন ব্যাগ এলাউ করেনা সেজন্য কোন বড় ব্যাগ নিয়ে যাবেন না জাস্ট কাগজপত্রগুলো একটা ফাইলে নিয়ে চলে যাবেন । আর যদি ব্যাগ নিতেই হয় তাহলে এম্বেসীর বাইরে টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষ ব্যাগ রাখার দায়িত্ব নেয় সেখানে রাখতে পারেন ।


সর্বশেষ আপনার কোন জিজ্ঞাসার প্রয়োজনে ভারতীয় দুতাবাসের হটলাইনে ফোন করে যেকোন ব্যাপারে জানতে বা পরামর্শ করতে পারেন  Hot Line: 09612 33366609614 333 666

যারা  ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা নিয়ে নেপাল ভুটান ঘুরে আসতে চান তারা কিভাবে ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তার বিস্তারিত পাবেন এই পোস্টে 


তারপরও কোন ব্যাপারে কোন কনফিউশন বা আরও কিছু জানতে চাইলে আমাকে ফেইসবুকে নক করতে পারেন 

এছাড়া আমার ট্রাভেলিং গ্রুপ  স্বপ্নযাত্রা এর ফেইসবুক গ্রুপেও যোগ দিতে পারেন ট্রাভেল রিলেটেড যেকোন কিছু জানতে 

16 comments:

TVS Metro said...

Thank you for your kind information.. It's really helpful for us..

Unknown said...

Bhai apni ja bolsen sheta thik na. Amar passport birth certificate diye kora chilo but ami NID diye apply korsi. Ami khub bhalomotoi visa paisi. As long as the spelling and the information are same with passport, its okay to submit the alternative document. Doya kore manushke shudhu shudhu bibhranto korben na.

Arafat said...

I live in a rent house. How i submit electricity bill with name of my father ?

Billahmamun@gmail.com said...

আপনি আমাকে দয়া করে ফেইসবুকে নক দিন ।। আমি বুদ্ধি শিখিয়ে দিবো :) পোস্টের নিচে আমার ফেইসবুক লিংক আছে

Unknown said...

আমার বাবার নামের সাথে সার্টিফিকেট এর নামের সম্পুর্ন মিল নাই কি করতে পারি ?

Billah Mamun said...

জাকুয়ান আমাকে ফেইসবুকে নক দাও ।।

Anonymous said...

কঠিন তো।।।ব্লগার মামুন

Unknown said...

Bhaia $150 kebol nie gele ghura fira korbo kivabe?

International Master Card use korte parbo naki rekhe dibe dhore?

Billah Mamun said...

150 কেবল আপনি এন্ড্রোস করে নিবেন আর বাকী টাকা আলাদাভাবে ডলার হিসেবে নিজের সাথে নিয়ে নিবেন ।। বুঝেছেন ? আর ইন্টারন্যাশনাল কার্ড ইউজ করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই :)

Resonance TV said...

ধন্যবাদ, ভাই

Unknown said...

গুলশান কি এন্ড্রোস করতে পারবো?

Unknown said...

Thanks a lot.

Unknown said...

ভাই ডলার এন্ড্রোস করা ছাড়া অামি যদি অামার ইন্টারন্যাশনাল কার্ডে ডলার নিয়ে যাই তা কি ব্যাবহার করতে পারবো বাহিরে??

Unknown said...
This comment has been removed by the author.
Sharif said...

Enter your comment...Ami passport koresi NID Diye. NID te amar namer suru MD. Diye but passport e suru Mohammad diye. Amar visa pete ki problem hote pare?

Unknown said...

আমার একটা প্রশ্ন??
আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে আমার বাবা মায়ের ভিসা করা যাবে কিনা??
যদি না যায় সেক্ষেত্রে করণীয় কী??

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন